আধুনিক ব্যাংক কি? আধুনিক ব্যাংকের কার্যক্রম | Activities of Modern Bank

আধুনিককালে ব্যাংক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে।

আমানত গ্রহণ ও ঋণদান ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত হলেও মক্কেলদের এবং দেশের স্বার্থে ব্যাংক অর্থ ও অর্থসংক্রান্ত বহুবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আধুনিক ব্যাংকের কার্যক্রম

নিম্নে আধুনিক ব্যাংকের কার্যাবলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :

১. আমানত গ্রহণ: সারা দেশের জনগণের কাছ থেকে তাদের বিক্ষিপ্ত সঞ্চয়গুলো আমানত হিসেবে গ্রহণ করা ব্যাংকের
প্রধান কাজ। ব্যাংক সঞ্চয়ী, চলতি ও মেয়াদি হিসাবের মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে। এ লক্ষ্য জনগণকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করাও ব্যাংকের আকেরটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

২. অর্থ বা দাবি পরিশোধ : জনসাধারণ যে অর্থ ব্যাংকে জমা রাখে তা থেকে গ্রাহকদেরকে তাদের দাবি অনুযায়ী জমাকৃত অর্থ ফেরত দেওয়াও ব্যাংকের অন্যতম কাজ। চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের আমানতকারীগণ তাদের আমানত হতে অর্থ ফেরত চাইলে ব্যাংক তা চাহিবামাত্র পরিশোধ করে থাকে।

৩. নোট প্রচলন : মধ্যযুগের শেষ দিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাংক ব্যবসায় শুরুর ফলে সরকার অনুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নোট ও মুদ্রার প্রচলন করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নোট প্রচলন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজই হলো নোট ও মুদ্রার প্রচলন করা।

৪. বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি : চেক, প্রত্যয়পত্র, ড্রাফট, পে- অর্ডার, চেক কার্ড, ভ্রমণকারীর চেক, প্রত্যয়পত্র ইত্যাদি বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করে আধুনিক ব্যাংক দেনা-পাওনা নিমিত্তেও আর্থিক লেনদেনে সহায়তা করে। এসব বিনিময় মাধ্যমসহ বর্তমান বিশ্বে অনেকটা নগদ অর্থের মতোই ব্যবহৃত হয়।

৫. ঋণ দান : ব্যাংক হলো ধার ও ঋণের ব্যবসায়ী। তাই আমানত হিসেবে বা অন্য কোনো উৎস হতে সংগৃহীত অর্থ ব্যাংক ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও অন্যদেরকে ঋণ হিসেবে প্রদান।

৬. বিনিময় বিলের বাট্টাকরণ : ব্যবসায়ীগণের জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংক তাদের বিনিময় বিল, হুন্ডি ইত্যাদি মেয়াদপূর্তির আগেই ভাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেয়। এজন্য ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে বাট্টা গ্রহণ করে এবং মেয়াদপূর্তিতে আদিষ্টের কাছ থেকে বিলের সম্পূর্ণ অর্থ আদায় করে নেয়।

৭. ঋণ নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ হলো দেশের ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যান্য ব্যাংক এ কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সবসময়ই সহযোগিতা করে। ঋণের পরিমাণ কাম্যস্তরে বজায় রাখার জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রণীত নীতিমালা অনুসরণ করে।

৮. অর্থ স্থানান্তর : ব্যাংক বিশেষত বাণিজ্যিক ও বিনিময় ব্যাংকসমূহ গ্রাহকদের প্রয়োজনেও লেনদেন নিষ্পত্তিতে দেশে- বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে। এজন্য ব্যাংকগুলো নানান প্রক্রিয়ায় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত শাখা ও প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সহজেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে অর্থ পাঠায়।

৯. মূলধন গঠন : জনগণের কাছ থেকে তাদের বিক্ষিপ্ত সঞ্চয় সংগ্রহ করে ব্যাংকসমূহ মূলধন গঠনে সহায়তা করে। দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক প্রগতির জন্য যে বিপুল পরিমাণ মূলধনের প্রয়োজন হয়, অর্থ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ব্যাংকগুলো তা সংস্থানের চেষ্টা চালায়।

১০. মূল্যবান সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ : ব্যাংকগুলো জনসাধারণের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ছাড়াও তাদের মূল্যবান সম্পদ; যথা- স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার, জমি ও অন্যান্য সম্পত্তির দলিলপত্র, মূল্যবান নথি ও কাগজপত্র, শেয়ার, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি নিরাপদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।

১১. লাভজনক বিনিয়োগ : বর্তমানকালে ব্যাংক শুধুমাত্র ঋণই প্রদান করে না, বরং বিশেষায়িত ব্যাংকসমূহ ও ক্ষেত্রবিশেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিভিন্ন লাভজনক খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটি, শেয়ার ইত্যাদি ক্রয় এবং লাভজনক খাতে অন্যদের সাথে যৌথ উদ্যোগে অংশ নেয়।

আধুনিক ব্যাংক কি আধুনিক ব্যাংকের কার্যক্রম

অন্যান্য কার্যাবলি

উপরে বর্ণিত কার্যাবলি ছাড়াও আধুনিক ব্যাংকসমূহ আরও অনেক কার্য সম্পাদন করে থাকে এর বিবিধ কাজের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো –

ব্যাংক সরকার এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার তহবিল সংরক্ষণের কাজ করে। এ সকল প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের পাওনা সংগ্রহ করে এবং ব্যয় পরিশোধ করে। বাংলাদেশে টি.এন্ড.টি, ওয়াসা, পিডিবি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের বিল সংগ্রহের দায়িত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সম্পাদন করে।

সরকারকে সাহায্য প্রদান কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো সরকারকে ঋণ দেয়। এতদ্ব্যতীত সরকার কর্তৃক প্রচারিত সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি, বন্ড প্রভৃতি বিক্রয় করে সরকারের পক্ষে অর্থ আদায় করে এবং পাওনা পরিশোধ করে। সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়নেও ব্যাংকগুলো সহযোগিতা দেয়।

ঋণদান, গ্রাহকদের পক্ষে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি, অর্থ স্থানান্তর ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কর্ম সম্পাদন করে ব্যাংকসমূহ একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সহায়তা করে, তেমনি অন্যদিকে প্রত্যয়পত্র, পর্যটকের চেক, ব্যাংক ড্রাফট প্রভৃতি ইস্যু করে বৈদেশিক বাণিজ্যকেও সচল রাখে। বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থসংস্থান ছাড়াও ব্যাংকগুলো বিভিন্ন টেকনিক্যাল সহায়তাও প্রদান করে।

এছাড়াও আধুনিক ব্যাংক নিচের কাজ গুলো করে থাকে। যেমন-

  • গ্রাহকের প্রতিনিধিত্ব করা
  • গ্রাহকের আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা
  • গ্রাহকের পক্ষে বিমার প্রিমিয়াম, পানি, গ্যাস, টেলিফোন, বিদ্যুৎ ইত্যাদির বিল প্রদান
  • গ্রাহকদের পক্ষে প্রাপ্ত চেকের মূল্য আদায় ও লভ্যাংশ সংগ্রহ
  • গ্রাহকের অছি হিসেবে কাজ করা ইত্যাদি

শেষকথা

উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যাচ্ছে যে, ব্যাংক অর্থসংক্রান্ত নানাবিধ কার্যসম্পাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করছে। অপরদিকে, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবকাঠামো মজবুত করছে।

Leave a Comment